ফ্রিল্যান্সিং ট্যুর


ruhul প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৮, ২০২৩, ৮:০৮ অপরাহ্ণ /
ফ্রিল্যান্সিং ট্যুর

রুহুল আমিন: শহরের ধুলা আর ধোঁয়ায় মনটা যখন বিরক্ত, তখন গেলাম নৌকা সফরে। নদীর পানিতে গোধূলির আলো ঝিকমিক করবে, এই মুহূর্তে প্রতিদিনের পাংশুটে দিনগুলো ভুলে একটু সময় কাটাতে গেলাম। নৌকার দাঁড়ের ছপ-ছপ শব্দ আর এক মায়াবী মহূর্ত… এটি হয়ে উঠে নিজেকে নিজের দেওয়া সেরা উপহার। আমরা সবাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচ নিজে চালানো জন্য কয়েকজন মিলে একটা টিম হিসেবে একসাথে কাজ করে থাকি। আমাদের ফ্রিলান্সিং টিমের ম্যানেজার আব্দুল্লাহ ভাই হঠাৎ একদিন ভ্রমনের প্রস্তাব করলো। আমরা সকালে মিলে পদ্মা নদী এবং রবীন্দ্র কুঠি বাড়ি ভ্রমনের পরিকল্পনা করলাম। পরিকল্পনা মাফিক বুধবার সকালে সবাই মেইন গেটে হাজির হলাম। মেইন গেট থেকে আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সাথে ওনার ছোট বোন ও ছোট ভাই ওবায়দুল্লাহ, আলম ভাই, গালিব ভাই,জবা আপু, রেবেকা আপু ক্যাম্পাসের লাল ডাবল ডেকার বাসে চড়ে রওনা দেই কুষ্টিয়া শহরের উদ্দেশ্যে। লাহিনী বটতলা গিয়ে বাস থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেড়ে নেই। সেখানে আমাদের সাথে রাজিউল ভাই, সালাউদ্দিন ভাই এবং বন্যা আপু যুক্ত হন।সেখান থেকে বাসে চড়ে আলাউদ্দীন নগর যাই।আলাউদ্দীন নগর থেকে সিএনজিতে চড়ে শিলাইদহ ঘাটে যাই। শিলাইদহ ঘাটে গিয়ে আমরা নৌকায় চড়ে পাবনা খেয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। নৌকায় উঠার পর সালাউদ্দীন ভাইয়ের ক্যামেরায় সবাই সুন্দর মহূর্ত গুলোকে ফ্রেম বন্দী, কেউ আবার নিজের ফোনে সেলফি, ভিডিওগ্রাফীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আব্দুল্লাহ ভাইয়ের ছোট বোন পিচ্চির বয়স ৭/৮ বছর হবে। বাসের মধ্যে নিরব থাকলেও নৌকাতে হয়ে উঠলো চঞ্চল। সবার ছবি তোলার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখলো পিচ্চি। প্রকৃতির অপার নিসর্গের দেখা মিললো নিরবধি বয়ে চলা নদীর বুকে নৌকা ভ্রমণে। মাথার উপরে সুনীল আকাশ, তাতে বিক্ষিপ্ত মেঘ বালিকার ক্ষণে ক্ষণে লুকোচুরি। নিচে স্রোতস্বিনীর কুল কুল ধার। নদী পাড়ে কাশবন। নদীর পাড় ঘেষে থাকা বসতবাড়ির গাছ থেকে শ্বেতশুভ্রের হঠাৎ উড়ে যাওয়া। স্বপ্নীল আকৃতিতে বহমান নদীর জলরাশি-এমন অপর নিসর্গ দেখে মনে শিল্পীর রং তুলিতে আকা কোন মূর্ত হয়ে ওঠা ছবি। চারপাশের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌছালাম পাবনা খেয়া ঘাটে। ঘাটে নেমে চড়ের মধ্যে হাটতে লাগলাম। চরের পরিবেশ নিরব। মাটি ফুড়ে দন্ডায়মান শস্যে চারদিকে চির সবুজ। সেই চির সবুজ মাঠে কিছু সময় ফ্রেম বন্দী করে নিলো সবাই। সামনে নদীর মাঝে জেগে উঠেছে চড়। আমরা সেই চড়ে যাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠলাম কিন্তু আশেপাশে বাঁধা নৌকার মাঝিরে খুজে পেলাম না।আবদুল্লাহ ভাই ও ওবায়দুল্লাহ অল্প পানি দেখে হেঁটে যেতে পারবে ভেবে দুজনে জুতা খুলে নদীর মধ্যে হাঁটা শুরু করলো অল্প একটু যাওয়ার পাশে ধানের কাজে ব্যস্ত থাকা কৃষক নদীর গভীরতা সম্পর্কে আভাস দিলো তখন তারা পিছনে ফিরে আসলো। একজন মাঝি নৌকার কাছে আসলো তাকে আমরা সবাই মিলে চড়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম। তিনি বাজারে যাবেন তার বাজারে যাওয়ার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। গালিব ভাই নদীতে গোসল করার প্রস্তাব দেন তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমি আব্দুল্লাহ ভাই ও ওবায়দুল্লাহ গোসলে নেমে পড়ি। বাকি সদস্যরা নদীতে হাঁটু পানি পর্যন্ত নেমে পড়ে। রাজিউল ভাই ও সালাউদ্দিন ভাই রমনীদের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরে। হাঁটু পানিতে নামার পর গালিব ভাইয়ের শখের সানগ্লাস টা পানিতে পরে যায়। আমরা গোসলে নামা চারজন সাঁতার কেটে পাশের চড়ে যাই। চড় থেকে ফিরে এসে গোসল শেষ করে ঘাটে এসে রওনা দেই শিলাইদহ ঘাটের উদ্দেশ্য। নৌকায় উঠার পর সাউন্ড বাক্সে গান দিয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে গান গাইতে থাকি। সালাউদ্দিন ভাই আমাদের মাঝে সবচেয়ে ভাল গান গাইলো। হঠাৎ তার কন্ঠ থেকে ভেসে এলো-আমায় ভাসাইলি রে আমার ডুবাইলি রে, অকূল দড়িয়ার বুঝি কূল নাইরে, ও কূল নাই, কিনার নাই, নাইতো দইরার পাড়ি, তুমি সাবধানে চালাইয়ো মাঝি আমার ভাঙা তরি।গান গাইতে গাইতে আমরা শিলাইদহ ঘাটে পৌছালাম। শিলাইদহ ঘাট থেকে পায়ে হেটে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিলাম।তারপর কুঠি বাড়িতে ঢোকার জন্য টিকিট সংগ্রহ করলাম। রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান হচ্ছে কুঠিবাড়ী। এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলী কাব্যের অনুবাদ কাজও শুরু করেন। কুঠীবাড়ীটি বিভিন্ন চির সবুজ বৃক্ষে ঘেরা। রবীন্দ্রনাথের ব্যবহারকৃত বাড়িটি রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী হিসেবে পরিচিত। কুটিবাড়ীটি জাদুঘর হিসাবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরে ঢুকে তার বিভিন্ন বয়সের ছবি দেখতে পাই। তার পরিবারের সাথে বিভিন্ন মহূর্তের স্মৃতি ছবির ফ্রেমে দেখতে পাই। তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র গুলোর মধ্যে পানি পরিস্রুত করার যন্ত্র, পানি পরিস্রুত করার যন্ত্রের স্ট্যান্ড, একটি টেবিল, ঘাসকাটার যন্ত্র, লোহার সিন্দুক, একটি খাট, পালকি।জাদুঘরের বাহিরে একটি কূপও চৌবাচ্চা দেখতে পেলাম সেখানে বসে সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।জাদুঘরের দক্ষিণ প্বার্শে একটি পুকুর রয়েছে সেখানে তার নদী ভ্রমনের একটি বজ্রা রয়েছে। সেখানে একটা শিশুদের জন্য দোলনা রয়েছে। দোলনাতে জোবা আপু বসে দোল খাচ্ছিলো সে এক সময় নিরাপত্তা কর্মী এসে ওনাকে সতর্ক করে যান। জাদুঘর দর্শন শেষে আমরা বাহিরে এসে বিভিন্ন কেনাকাটা করে কুষ্টিয়া শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। কুষ্টিয়া এসে ৭ঃ৩০ ক্যাম্পাস বাস ধরে আমরা ক্যাম্পাসে চলে আসি।

প্রকাশিত: দৈনিক জনতা
প্রকাশকাল: ২১ জুন, ২০২২

frelaceeing tour janata