রসের সন্ধানে আমরা ক’জন
ruhul
প্রকাশের সময় : আগস্ট ১২, ২০২৩, ১১:২৪ অপরাহ্ণ /
০
পড়া হয়েছে ১৯
রুহুল আমিন: ঘরের বাহিরে হাড় কাঁপানো শীত। এই শীতে লেপ কাঁথা ছেড়ে বিছানা থেকে উঠতে মন চায় না। এই শীতের সকালে রুমমেট ভোরবেলা ডাক দিয়ে বললো ভাই ঘুম থেকে ওঠেন খেজুর রস খেতে যাবো। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর থেকে অজানা অচেনা পরিবেশকে সবাই আপন করে নেয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মাঝে আঞ্চলিক ভাষা, সাংস্কৃতিক,ধর্ম বর্ণ বিভিন্ন পার্থক্য থাকা সত্বেও তৈরী হয় এক মেলবন্ধন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে প্রতিদিন তৈরী হয় হাজারো গল্প ও স্মৃতি। সেই স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করতে সাদ্দাম হোসেন হলের ১৩২ নং রুমের তিন রুমমেট হৃদয়, খুশু এবং রায়হানের সাথে বের হলাম খেজুর রস অভিযানে। বঙ্গবন্ধু হল পকেট গেটে গিয়ে ভ্যানে উঠলাম ত্রিবেণী গ্রামের উদ্দেশ্যে। শীতের সকালে চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। শিশির স্নাত পিচ ঢালা রাস্তায় তিন চাকার যান চলতে লাগলো। উপভোগ করতে লাগলাম চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ সরিষা ক্ষেতের ফুটন্ত ফুলের হলুদ মাঠ, পিয়াজ রসুনের সবুজ ক্ষেত, মাচায় ঝুঁলতে থাকা সিম আর লাউয়ের বাহারি ফুল। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম ত্রিবেণী গ্রামে। গাছির বাসায় গিয়ে দেখি আমাদের আগে অনেকেই পৌঁছে গেছে শীতকে উপেক্ষা করে খেজুর রসের স্বাদ নিতে। প্রথমবার দুই কলসি রস নিয়ে আসলো গাছির সহযোগী। আমাদের ভাগ্যে রস জুটলো না। আমাদের সাথেই আরো কয়েকজন রসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। রুমমেট ছোটভাই রায়হান বলতে লাগলো ভাই শীতে কষ্ট করে আসায় বৃথা, রস মনে হয় আজকে আর খাওয়া হলো না। গাছির সহযোগী বললো- অপেক্ষা করেন আরো রস লাগানো আছে। ওগুলো কিছুক্ষণ পর নিয়ে আসবে। হৃদয় বললো এখানে থাকলে রস পাবো না চল আমরা মাঠে গাছের নিকটে যাই। খুশু বললো একদিক দিয়ে যাবি অন্য দিক দিয়ে যদি নিয়ে আসে তাহলে আর পাবি না এখানেই থাকি। শীতের সকালে কথা বললে মুখ থেকে সাদা ধোয়া বের হতে থাকে। অতঃপর একটু পর রস নিয়ে আসলো আমরা সেই কাঙ্খিত রস খেলাম। এক গ্লাস রস খেয়ে তৃপ্তি ঢেকরে শীতের সকল কষ্টের কথা ভুলে গেলাম। এবার ফেরার পালা। সবাই বলতে লাগলো যে মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঠতে হাটতে ফসলের মাঠের সৌন্দর্য উপভোগ করে ক্যাম্পাসে ফিরবো। কুজ্ঝটিকা ভেদ করে ফুঁটে উঠলো সূর্যের আলোকরশ্মি। সবুজ ঘাসের উপর জমা সূর্যালোকিত শিশির বিন্দু চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে। সকালের সূর্যালোকে প্রতিটি উদ্ভিদ যেন নবরূপে সাজিয়ে উঠেছে। হাড়ভাঙা শীত আর ঘন কুয়াশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোর থেকে মাঠে নেমেছেন গ্রামবাংলার প্রকৃত শৈল্পিক কৃষকরা।
কিছুদূর যেতে কয়েকজনকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারন করার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মেলে।
প্রকাশ কাল: ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩
প্রকাশিত: খোলাকাগজ

আপনার মতামত লিখুন :