গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাঃ প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি


ruhul প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৬, ২০২৩, ২:৫০ অপরাহ্ণ /
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাঃ প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি

রুহুল আমিন: দ্বিতীয় বারের মতো ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে গত বছর উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির এই আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রয়োজনের তাগিদে ২২ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কে গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষায় তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।এবারো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করবে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিলো। গুচ্ছের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হারাতে পারে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য, সার্বজনীনতা এবং হয়ে উঠতে পারে অঞ্চল কেন্দ্রিক। কৃষিতে গত বছর আসন সংখ্যার সিলেকশন পদ্ধতি নামে বৈষম্য মূলক নীতি ছিলো। আসন সংখ্যার তিনগুণ পরীক্ষা দিতে পারতো। এ বছর কর্তৃপক্ষের বোধদয় হয়েছে সে নীতি বাতিল করেছে। নিশ্চয় এটি একটি ভালো উদ্যোগ। গতবারের তুলনায় এবার গুচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ ক্লান্তি, আর্থিক সাশ্রয়, ভোগান্তি কমানোর জন্য গুচ্ছের আবির্ভাব হলেও ভোগান্তি কমার চেয়ে ভোগান্তি আরো বেড়েছে।একজন শিক্ষার্থী প্রথমে ভর্তি ফি দিয়ে ভর্তি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়েছে। আবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে। কোন কোন শিক্ষার্থীকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ২/৩ বার করে ভর্তি হতে হয়েছে। প্রত্যেকবার ভর্তি হওয়ার জন্য দিতে হয়েছে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি। এক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে সেখানে ভর্তি বাতিল করতেও দিতে হয়েছে ফি। এছাড়াও কাগজ-পত্র তুলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী এবং অবিভাবকদের পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি ও দূর্ভোগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বনামধন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭/৮ বার মেধাতালিকা দিয়ে ভর্তির  শিক্ষার্থী না পেয়ে দিতে হয়েছে গনবিজ্ঞপ্তি। গনবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের আসন সংখ্যা পূর্ণ করতে পারেনি। কাঙ্খিত শিক্ষার্থী না পেয়ে আসন সংখ্যা খালি রেখে শেষ করতে হয়েছে তাদের ভর্তি কার্যক্রম। নিদিষ্ট সময়ে তাদের ক্লাস ও শুরু করতে পারেনি। এর ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো প্রথম দিকে গুচ্ছ থেকে সরে এসে নিজেরা স্বতন্ত্র ভাবে পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ মূহুর্তে এসে গুচ্ছ তে থেকে যায়। আসন খালি থাকায় বঞ্চিত হয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা, মানসিক অশান্তি, ভ্রমন ক্লান্তি, আর্থিক ভাবে ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় নাই তার আগেই শুরু হয়ে গেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। রেজাল্টের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার ফলে প্রায় সকল মেধাবী শিক্ষার্থী দুশ্চিন্তা এড়াতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে। পরে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে ভর্তি বাতিল করে আসে। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন স্বনামধন্য কলেজ গুলোতে সিট ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ভবিষ্যতে সংকট দেখা দিতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভর্তি বাতিল করতে আবার ফি দিতে হয়। এ যেন শিক্ষার্থীদের উপর মরার অপর খাঁড়ার ঘা। যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে হতো তাহলে শিক্ষার্থীরা মানসিক অশান্তি এবং আর্থিক দিক থেকে সাশ্রয়ী হতো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা থাকতো না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসে শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দেশের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবীরা বেশি সুযোগ পেয়ে থাকে। সে সকল মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে গতবারের সমস্যা গুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ভাবে মেধাতালিকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় বন্টন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং সার্বজনীনতা না হারায়। এটির ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল কেন্দ্রিক না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ, ভ্রমন ক্লান্তি, ভোগান্তি দূর এবং আর্থিক ভাবে সাশ্রয়ী হয় তবেই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে সার্থকতা আসবে।

প্রকাশিত: দৈনিক ইনকিলাব
প্রকাশকাল: ৭ আগস্ট, ২০২২
লিংক: https://shorturl.at/blqGV

7 r3 c1