অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র – পর্যটন শিল্প


ruhul প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৮, ২০২৩, ৭:৫২ অপরাহ্ণ /
অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র – পর্যটন শিল্প
রুহুল আমিন: ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সারা বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’ পালিত হয়। ১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সকল সদস্য দেশে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বরাবরের ন্যায় এবছরেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের মূল প্রতিপাদ্য হলো “সর্বব্যাপী উন্নয়নের জন্য পর্যটন”। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে বহু পরিব্রাজক ও ভ্রমণকারী মুগ্ধ হয়েছেন। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, পাহাড়-পর্বত, অরণ্য ঘেরা জলপ্রপাত, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। ইউনেস্কোর ঘোষণায় ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। কক্সবাজারে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা ১২০ কি.মি দীর্ঘ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগর পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মিত হয়েছে। যার ফলে পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে কয়েকগুণ। বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলগুলি পর্যটন খাতের বিকাশে অপার সম্ভাবনা দুয়ায় উন্মোচন করেছে। হাওর অঞ্চলের সাগর সদৃশ জলরাশি তার অপরূপ মহিমায় ভ্রমণবিলাসীদের তৃপ্ত করছে। হাওর, বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় চড়ে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মধ্যে ভেসে বেড়ায়।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানকে কাজে লাগিয়ে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছি। বিশ্বে প্রতিটি দেশে পর্যটন একটি শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি বিবেচনায় সেরা ৫ টি খাতের মধ্যে পর্যটন খাত অন্যতম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটন খাত অনেক পিছিয়ে। আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উদীয়মান এই শিল্প। হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, পর্যটন স্পটে দোকান, বিনোদনমূলক বিভিন্ন আয়োজন ও রাইড ইত্যাকার পন্থায় লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত এসকল সেক্টর থেকে একদিকে উন্নয়ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনধারার, অপরদিকে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে প্রচুর রাজস্ব।
দেশের এসকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার পক্ষ থেকে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেই সাথে পর্যটকদের আবাসিক প্রয়োজন পূরণে হোটেল-মোটেল ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা। আমাদের পর্যটন স্পট গুলোকে দেশ ও দেশের বাইরে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। প্রত্যাশিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আন্তার্জাতিক প্রচার-প্রচারনা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হবে। এই খাতের দূর্বল এবং সবল দুইটি দিকই চিহ্নিত করে পরিকল্পনা মাফিক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নবদিগন্তের শুভ সূচনা ঘটাতে হবে।
আমাদের পর্যটন স্পটগুলাতে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন। নৌকায় ভ্রমনের সময় জলদস্যুদের আক্রমণ এবং স্থলে বিভিন্নভাবে হামলায় পর্যটকদের নগদ টকা, মেবাইল ফোনসহ মূল্যবান সম্পদ সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো প্রাণ হারাতে হচ্ছে। নিরাপত্তা বাড়লে দেশী ও বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে। পর্যটন স্পট গুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং খাবার মূল্য লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সরকারের কঠোর নজরদারিতে পর্যটন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাবারে দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
পর্যটন এলকায় বেশি মানুষের সমাগম হওয়ার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে পর্যটকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা বেড়েই চলছে। প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন স্পটগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাও থাকা আবশ্যক। সেই সাথে পর্যটকরা যেন ময়লা যত্রতত্র না ফেলে নির্ধারিত স্থানে ফেলে সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের পর্যটন খাতের উন্নয়ন টেকসই হবে না। এছাড়া হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য  সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রেগুলোর যথাযথ মান উন্নয়ন করতে পারলে দেশী-বিদেশী উভয় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব। আর এভাবেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন সাধিত হবে।
প্রকাশিত: বাংলাদেশের আলো এবং সংবাদ
প্রকাশকাল: ২৭ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
image 750x 61513f0d7b3e2 doinik songbad