স্মার্টফোন হোক প্রতিভা বিকাশের হাতিয়ার


Maruf Hasan প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৫, ২০২৩, ১০:০৯ অপরাহ্ণ /
স্মার্টফোন হোক প্রতিভা বিকাশের হাতিয়ার
মারুফ হোসেন: দক্ষতা থাকলে কোথাও না কোথাও ঠাঁই মেলে। প্রযুক্তির এ যুগে নিজেকে দক্ষ করে তোলা কঠিন বিষয় নয়। শুধু প্রয়োজন প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। আমাদের কমবেশি সবার হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। কিন্তু এই ডিভাইসটির স্মার্ট ব্যবহার আমরা কয় জনে করি? একাডেমিক ভালো রেজাল্ট প্রয়োজন রয়েছে, তার সঙ্গে নিজের দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেওয়াও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিশু-কিশোরের মনে শুধু পরীক্ষায় ভালো করার বীজ বপন না করে, তাদের ভেতরের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলা দরকার। পরিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই শিশুশিক্ষা হোক আনন্দদায়ক। শিশু শিখবে, তবে তা যেন আনন্দের সঙ্গে হয়, যা শিখবে তার প্রতিফলন যেন ঘটে শিশুর বাস্তব জীবনে। শিশুকে সত্য কথা বলতে হবে, এটা শেখালেন, এ সম্পর্কে নানান গল্প সে শুনল কিংবা পড়ল, ঠিক এটাও খেয়াল রাখতে হবে, সে যেন সত্য বলে, মিথ্যার আশ্রয় না নেয়। তাকে শেখালেন সাভারে আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ অবস্থিত, এর পাশাপাশি শিশুকে স্মৃতিসৌধে নিয়ে গেলে সে সচক্ষে এটি অবলোকন করল এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জিত হলো তার। এতে সে মুখস্থ না করেই সহজে বলতে পারবে, আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত।
কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, বিতর্ক, সংগীত, আঁকিবুঁকি, কারুকাজ, সেলাই, পাবলিক স্পিকিং, আইটি, লেখালেখি, রান্না, অনলাইন বিজনেস ইত্যাদি কত কিছু শেখা যায়। আর ইউটিউব, গুগলের এই সময় এগুলো শেখার রয়েছে অবারিত সুযোগ। সন্তানের কোনদিকে ঝোঁক বেশি, কোন কাজগুলো করতে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেগুলো তাকে করতে উত্সাহের পাশাপাশি সহযোগিতা করুন। তার প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করুন। ছেলেমেয়ের কবিতা পড়া পছন্দ হলে তাকে পরিবারের সদস্যদের সামনে কিংবা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে বলুন, সাহস দিন। একসময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে তার সমস্যা হবে না। অনায়াসেই বলে যেতে পারবে মিনিটের পর মিনিট কিংবা ঘণ্টা। তবে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। সন্তান উপযুক্ত হলে মুঠোফোন দেওয়া যায়, তবে সে স্মার্টফোনের স্মার্ট ব্যবহার করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তরুণদের অনেকের হাতেই মোবাইল ফোন। দেখা যায়, তারা এটি দিয়ে যেসব কাজ করে তা প্রোডাক্টিভ নয়, তারা স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে। ফেসবুকের লাইক কমেন্টই যেন সব। আমার আজকের ছবিটাই কয়টা কমেন্ট, কয়টা লাইক পড়ল সব মনোযোগ যেন সেদিকেই। অথচ সময়গুলো কাটানো যেত, ইংলিশ স্পিকিং শুনে, পত্রিকায় কলাম, সংবাদ, ফিচার কিংবা নানান লেখা পড়ে। ধরুন, আপনার ভালো লাগা কাজ ফটোগ্রাফি, আপনি ফটোগ্রাফিসংক্রান্ত গ্রুপ, পেজে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। গ্রুপে নিজের তোলা ছবিটি শেয়ার করতে পারেন। এতে গ্রুপের মেম্বারদের সঙ্গে আপনার পরিচয় বাড়ল। আপনি চাইলে আপনার নিজের পেজ খুলে বা আইডিতে নিজের সৃষ্টিশীল কর্মগুলো শেয়ার করতে পারেন। এতে একসময় অনেকেই আপনার কাছ থেকে আপনার প্রোডাক্ট কিনতে চাইবে। মোটকথা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অযথা সময় ব্যয় না করে, সে সময়গুলো যেন ফেসবুকে ফলদায়ক হয়। তার জন্য চাই সচেতনতা এবং শেখার প্রবল ইচ্ছা। লাইক, কমেন্ট কিংবা ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা যেন না ঢোকে নিজের মধ্যে।
সরকারি-বেসকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। আপনাকে চোখকান খোলা রেখে এগুলো সম্পর্কে তথ্য নিতে হবে। প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কাজে লেগে পড়ুন, চিন্তা কমে যাবে। আস্তে আস্তে আয় করা শুরু হলে নিজেদের মধ্যে তৈরি হবে আত্মবিশ্বাস। নিজের যা আছে সেটুকুই কীভাবে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবুন। নতুন উদ্যোক্তাদের পথকে আরো সহজ করতে কর্তৃপক্ষকে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। নবীন উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেলে, তরুণরাও উদ্যোগ নিতে উত্সাহ পাবে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ নানান কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ভালো আরবি জানা থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আয়ের সুযোগ রয়েছে। ইংরেজি, আরবিসহ অন্যান্য ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনি এগিয়ে থাকবেন। বাংলা ভাষাটাই ভালো করে শিখুন, অনেকে শুদ্ধ করে বাংলাটাই বলতে পারে না। কথায় মাধুর্য আনতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ আয় করা যায়। ট্রেনিং নিয়ে আপনিও ঘরে বসে ইনকাম করতে পারেন।
একদিন বড় হব, আস্তে আস্তে কাজে জড়াব, আয় করব—এমনটা না ভেবে, যেটাতে আপনি দক্ষ, সেটি কাজে লাগিয়ে কিছু আয় করা যায় কি না, তা ভাবা দরকার। কিছু একটা করে পড়াশোনার মোটামুটি খরচ চালিয়ে নিতে পারলে পরিবারের ওপরও চাপ কমে। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য সৃষ্টিশীল কর্মে যুক্ত রাখা। ইতিমধ্যে রোবট দিয়ে কাজ করানো শুরু হয়ে গেছে। বাসায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে রোবট। হোটেলেও রোবট দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। একটা সোনার হরিণ ‘কর্মসংস্থান’-এর পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা হয়রান। কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। আসছে নয়া নয়া সব চ্যালেঞ্জ। আসন্ন চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। তাই অযথা স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ ও অবকাশ কোথায়?
প্রকাশিত: দৈনিক ইত্তেফাক
প্রকাশকাল: ০৩ জুলাই, ২০২৩
ই-পেপার লিংক:
https://epaper.ittefaq.com.bd/m/139874/64a199d85061b
140065 1