আসুন, মানুষের তরে হাত বাড়িয়ে দেই


আশিকুর রহমান প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৪, ২০২৩, ৩:২৩ অপরাহ্ণ /
আসুন, মানুষের তরে হাত বাড়িয়ে দেই

আশিকুর রহমান: দেশের উত্তর ও মধ্যমাঞ্চলের বিশাল এলাকা এখন বন্যা কবলিত। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম হতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আসায় সিলেট সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভরাট হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে শুধু থৈথৈ পানি আর পানি। এ বন্যার কারনে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সকল স্তরের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বন্যায় কবলিত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শহর অঞ্চলের সমস্ত রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট, বাসস্থান, পুকুরের মাছ। গোলা ভরা ধান, গোয়ালের গরু, বসবাসের শেষ আশ্রয় স্থল টুকুও এখন পানির নিচে ক্ষতিগ্রস্ত। অত্র অঞ্চলের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বাহিরে হাটু সমান পানি, দাঁড়ানোর মতো এক টুকরো জায়গা অবশিষ্ট নেই। সন্তানের শেষ আশ্রয়স্থল তার অভিভাবক, কিন্তু পানির উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় সন্তানের জীবন বাঁচাতে বাবা মা হাঁড়ি-পাতিলের ভিতরে বসিয়ে পানিতে ভেসে দিচ্ছে; যেন সন্তানের ক্ষতি না হয়। আবার অনেকে বন্যার ভয়াবহ প্রকোপে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান নিয়েছে। শিশু, বয়োবৃদ্ধের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কষ্ট বেশি। সিলেট, সুনামগঞ্জের অধিকাংশ  অঞ্চলের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে তারা বাইরের কোন জেলার সাথে সংযোগ করতে পারছে না। রান্না-বান্না বন্ধ, সকল নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। শুকনো রুটি, বিস্কুট, গুড়, ও চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেচে আছে। পানির স্রোত ক্রমাগত বাড়ছে ও সমুদ্রপিষ্ঠ থেকে পানি ৪৪ ডিগ্রি উপরে অবস্থান করছে। ফলে অত্র এলাকায় লোকজন তাদের বাড়ি ঘরে আটকা পড়েছে। অনেকে যোগাযোগ করে উদ্ধারের জন্য আহ্বান করলেও অনেকের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তারা অসহায়ত্ব নিয়ে অপেক্ষা করছে উদ্ধার অভিযান চালানোর। তারা অপেক্ষা করছে বাঁচার। অসহায়ত্ব কাকে বলে তা অত্র অঞ্চলের মাটি ও মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে অনুভব করছে। গত শুক্রবার (১৭জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় যে, জুম্মার নামাজ পানিতে দাড়িয়ে আদায় করছেন বন্যা কবলিত লোকজন। পানির উচ্চতা এত প্রবল বেগে বাড়ছে যে, এখন সেই দাঁড়ানোর মত জায়গা টুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন এই অসহায় বানভাসি মানুষদের বেশি জরুরী উদ্ধার অভিযান। অভিযান না হলে তারা আরো কঠিন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। শীঘ্রই সরকারী-বেসরকারি ভাবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ সকল স্তরের মানুষ মোতায়েন করে তাদের উদ্ধার করা জরুরী।

Screenshot 20230814 150913 Facebook

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক ধরে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন দুজন। বর্ণি এলাকা, কোম্পানীগঞ্জ ছবি: প্রথম আলো।

এমতাবস্থায় সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সব ভেদাভেদ ভুলে বন্যার্তদের রক্ষায় এগিয়ে আসি। এখন প্রয়োজন বন্যার্তদের সর্বাত্মক ভাবে সাহায্য করা। সারাদেশের সার্মথ্যবান মানুষজন তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়াই। সামনে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। অনেকের কোরবানীর বরাদ্দকৃত অংশ থেকে বন্যার্তদের জন্য কিছু ব্যয় করে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। এতে অপেক্ষাকৃত ছোট পশু কোরবানীও করা হবে। অসহায়, দুস্থ মানুষের কল্যাণও হলো। কুরবানীর চামড়া বিক্রির টাকাও তাদের জন্য সাহায্য পাঠাতে পারি। সুতরাং আজ এসব বন্যার্ত, অসহায় মানুষদের জন্য ভাবা উচিত।
বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থল খুলতে হবে এবং খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারি। ত্রান সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেচ্ছাসেবক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুবসমাজসহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি, বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন পত্রিকা গুলো ত্রান তহবিল গঠন করে সাহায্য করতে হবে। এরকম জাতীয় সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সকলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আজ শুধু প্রয়োজন উদ্যোগের এবং উদ্যোক্তার। তবেই বন্যার্ত ও সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। তাদের দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। বন্যা কবলিত অঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সরকার পাশে দাঁড়াবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বানভাসি মানুষ মুক্ত হোক এই প্রত্যাশা করি।

 

প্রকাশকাল: ১৯ জুন, ২০২২

প্রকাশিত: প্রথম আলো।

লিংক: https://shorturl.at/tAKOP