গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী রসমঞ্জুরি


আশিকুর রহমান প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৪, ২০২৩, ১:১৬ অপরাহ্ণ /
গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী রসমঞ্জুরি
আশিকুর রহমান: রসমন্জুরী বাংলার এক বিখ্যাত মিষ্টি। মিষ্টি প্রস্তুত করা হয় দুধ, ছানা, ক্ষীর ও চিনির দ্বারা। মিষ্টিতে ব্যবহৃত ঘন রসের স্বাদের জন্য এই মিষ্টির নাম রসমন্জুরী। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে গাইবান্ধা শহরের সার্কুলার রোডে রমেশ চন্দ্র ঘোষ জেলায় সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভাবে রসমন্জুরী তৈরী করেন। সে সময়ে ভারতের উড়িষ্যা থেকে কারিগর এনে তিনি এই মিষ্টি তৈরী করতেন। পরবর্তী এক দশকের মধ্যেই রসমন্জুরীর স্বাদ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী  মানুষকে আকৃষ্ট করে। তার নাম অনুসারেই রমেশের রসমন্জুরী নামকরন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রসমন্জুরীর জেলা হিসেবে গাইবান্ধা পরিচিতি লাভ করেছে।
এই মিষ্টির বিশেষত্ব গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরী করা হয়। রসমন্জুরী তৈরীতে দুধ দিয়ে ছানা তৈরী করে ছোট ছোট  গোল্লা তৈরী করতে হয় এবং দুধ গরম দিতে দিতে যখন ক্ষীরের মত থমথমে হয় তখন ছানার তৈরী ছোট ছোট গোল্লা গুলো ক্ষীরের মধ্যে দিতে হয়। শুরুতে লম্বা বানানো হলেও বর্তমানে এর আকৃতি গোলাকার। এটি খেলে  দাঁত ও হাড়ের গঠন, সেরিটোনিন হরমোন ক্ষরণ, রক্তচাপ স্বাভাবিক সহ শরীরের বিভিন্ন কাজে ভুমিকা রাখে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় রসমালাই বানানো হলেও গাইবান্দার রসমন্জুরী স্বাদে ভিন্নতা ও অনন্য। অনেকে রসমন্জুরী কে রসমালাই ভাবলেও বাস্তবিক দিক থেকে দুটো আলাদা জিনিস এবং স্বাদ, আকৃতি ও তৈরীর পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। স্বাদে, গুনে ও মানে অতুলনীয় এই রসমন্জুরী মানুষের রুচির পরিবর্তন ও চাহিদার কারনে এটি হাতের স্পর্শ ছাড়াই আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী হয় তাই এর মান অক্ষুণ্ণ ও  দিন দিন বাড়ছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বর্তমানে এক রহস্য গাইবান্ধার রসমন্জুরী। শীত মৌসুমে আমেরিকা, কানাডা ও সৌদিআরব সহ বিভিন্ন দেশে এই মিষ্টির চাহিদা প্রবাসীদের। উৎসব, উপলক্ষ ছাড়াও এ অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে রসমন্জুরীর উপস্থিতি লক্ষ করার মত। পাশের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন অসংখ্য লোকের সমাগম ঘটে এই রসমন্জুরীর টানে। এছাড়াও সকল ছোট বড় মিষ্টি প্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় এই রসমন্জুরী। অতুলনীয় স্বাদের গাইবান্ধার এই রসমন্জুরী না খেলে যেন গাইবান্ধা ভ্রমণই বৃথা।
গাইবান্ধা শহরের সব মিষ্টির দোকানেই কমবেশি রসমন্জুরী পাওয়া যায়। এর মধ্যে রমেশ সুইটস, গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার, নারু মিষ্টান্ন ভান্ডার, দেব মিষ্টান্ন ভান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে দূরবর্তী ক্রেতাদের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে রসমন্জুরী বিক্রি করে থাকেন তারা। বর্তমানে প্রতি কেজি রসমন্জুরী ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রসমন্জুরী গাইবান্ধার ইতিহাস ঐতিহ্য হওয়ায় জেলা ব্যান্ডিংয়ে স্থান পেয়েছে। বিশ্ব দরবারে গাইবান্ধাকে পরিচিত করতে অনন্য ভূমিকা রাখছে এই রসমন্জুরী। তাইতো কবির ভাষায়ঃ
প্রিয় বাংলাদেশ আমার,
আজ পহেলা বৈশাখে কবিতার হিজিবিজি লিখে নষ্ট হই;
আজ আমার আছে গাইবান্ধার রসমন্জুরী, বগুড়ার দই।
প্রকাশকাল: ১০ এপ্রিল, ২০২২
প্রকাশিত: দ্বিমাসিক ডাকঘর (তৃতীয় সংখ্যা)
FB IMG 1691995648370