পরিশ্রম সফলতার একমাত্র সিঁড়ি


আখতার হোসেন আজাদ প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৩, ২০২৩, ৮:০০ অপরাহ্ণ /
পরিশ্রম সফলতার একমাত্র সিঁড়ি

আখতার হোসেন আজাদ: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বেঁচে থাকার জন্য তাঁকে কাজ করতে হয়। পৃথিবীতে কেউ সাফল্যের চামচ নিয়ে জন্মলাভ করেনা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করতে হয়। পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। একটি প্রবাদ আছে “পরিশ্রম সাফল্যের প্রসূতী”। প্রসূতী শব্দের অর্থ প্রসারিণী বা প্রসারকারিণী। পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব যা পরিশ্রমহীন মানুষের কাছে অলৌকিক বলে মনে হয়। যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হলো প্রখর ইচ্ছেশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। মানুষ যদি তার লক্ষ্যে অটুট থাকে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে তবে একদিন সাফল্যের সুউচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। পরিশ্রম হলো উন্নতির একমাত্র সিঁড়ি। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। আজ আমাদের চারপাশে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি দেখতে পাই। পৃথিবীর সোনালী ইতিহাসে অনেক সাফল্যমন্ডিত ব্যক্তির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যুগে যুগে কালে কালে যারা স্মরনীয় ও বরনীয় হয়েছেন প্রকৃতপক্ষে তাঁদের এইসব প্রতিভার পেছনে লুকিয়ে আছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। আধুনিক বিশে^ যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে সবই পরিশ্রমের ফসল। তাই কবি বলেছেন:
“পরিশ্রমে ধন আনে, পূণ্যে আনে সুখ
আলস্য দারিদ্র আনে পাপে আনে দুখ।”
পরিশ্রম হলো সফলতা লাভ করার একমাত্র উপায়। যে কোন ব্যক্তি বা জাতির সফলতার পেছনে একমাত্র নিয়ামক হলো পরিশ্রম। মানুষ কোন কাজে প্রথমবারেই সাফলতা লাভ নাও হতে পারে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বা নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলেই ধরা দেয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। কোন কাজে ব্যর্থ হলে তাতে হতাশ না হয়ে সেই কাজে কঠোর মনোনিবেশ করলে সফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব। এই জন্য বিখ্যাত কবি কালী প্রসন্ন ঘোষ বলেছেন:
পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার,
দশজনে পারে যাহা তুমিও পারিবে তাহা
পারো কি না পারো করো যতন আবার
একবার না পারিলে দেখো শতবার।
সত্যিই কালী প্রসন্ন ঘোষের এই কবিতা মন ছুঁয়ে প্রেরণা দিয়ে যায়। একজন ছাত্র কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমেই ভালো ফলাফল করে থাকে। একজন কৃষক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চাষ করেন বলেই হাসিমুখে ফসল উত্তোলন করেন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “Man is the arthitect of this fortune” ” অর্থ্যাৎ মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রতা। এটি খুব সহজেই অনুধাবনযোগ্য যে, পরিশ্রম হলো জীবনে সফলতা লাভের একমাত্র পন্থা। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে প্রতিভা বা ভাগ্যের দ্বারা অসাধ্য সাধন করা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে যারা কীর্তিমান তারা প্রতিভার চেয়ে কঠোর পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র আল কোরআনে সূরা আনফালে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না সে নিজের ভাগ্য নিজের কর্মের দ্বারা পরিবর্তন না করে।” হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, মানুষ তাই পায় যা সে করে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, সাফল্যের মাত্র দুই ভাগ হলো প্রতিভা আর বাকি আটানব্বই ভাগই হলো কঠোর পরিশ্রম। তিনি আরো বলেন, আমার আবিষ্কবারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলেই দুরূহ তত্ত¡গুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি। মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকেই প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যা প্রতিটি মানুষের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যে ব্যক্তি কঠোর চিন্তা ও পরিশ্রমের দ্বারা এই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবেন তিনিই সফলতা অর্জন করতে পারবেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টনকে সকলেই প্রতিভাবান বলে সম্বোধন করতেন অথচ তিনি নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সামান্য তাঁতী। কিন্তু নিজের চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা বিখ্যাত এটমিক থিওরি আবিষ্কার করেন। লিটল মাস্টার খ্যাত ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘যখন কঠোর পরিশ্রম করবে, ভাগ্য তোমার সহায় হবে। জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সেই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করেই ভাগ্যকে সহায় করে নিতে হয়।’ মার্কিন বেসবল খেলোয়াড় বেব রুথ বলেছেন, যে পরিশ্রম করতে জানে তাকে হারানোর সাধ্য কারো নেই। ইংরেজিতে প্রবাদ আছে- “ÒLife is no a bed of rose” অর্থ্যাৎ জীবন পুষ্প-শয্যা নয়। মানুষের জীবনের প্রতিটি সাফল্য নির্ভর করে তার কর্মের উপর। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার যথার্থই বলেছেন-“প্রতিভা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করো, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন: “Impossible is a word which is found only in the dictionary of a fool.”

স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট বুশ পরপর ছয়বার যুদ্ধে হেরেও কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছেশক্তির বলে সপ্তমবারে জয়লাভ করেছেন। ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা) মক্কার কাফিরদের এতো অত্যাচারের পরেও সত্যধর্ম প্রচার থেকে বিরত হননি। বরং কঠোর পরিশ্রমের ফলেই ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গ্রীসের বাগ্মী প্রবর ডিডমস্থিনিয়া প্রথম জীবনে তোতলা ছিলেন। কিন্তু প্রবল ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি পরবর্তীতে গ্রীসের বিখ্যাত বক্তা হবার সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মুঘল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর প্রথম জীবনে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হলেও পরবর্তীতে তিনিই সমগ্র ভারতবর্ষের স¤্রাট হতে পেরেছিলেন কেবলমাত্র অধ্যবসায় বা পরিশ্রমের ফলে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন মুচির কাজ করতেন। আরেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুস প্রথম জীবনে কেরানি ছিলেন। আন্ডরু কার্ণেগী অত্যন্ত গরীব পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি একটি খামারে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনিই আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। টমাস আলভা এডিসনকে ছেলেবেলাই সবাই গাধা বলে তিরস্কার করতো। কঠোর পরিশ্রমের ফলে গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক বাতিসহ শত শত আবিষ্কার করে পৃথিবীখ্যাত হয়েছেন। বিস্ময়কর ফুটবলার লিওনেল মেসি একসময় নিজের ফুটবলের ট্রেনিংয়ের খরচ জোগাতে চায়ের দোকানে কাজ করতেন। অথচ কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ তিনি বিশ^বিখ্যাত ফুটবলার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছেন। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। যারা কঠোর পরিশ্রমী, সৃষ্টিকর্তা তাদের সহায়তা করেন। পরিশ্রমহীন ব্যক্তিদের পরিণতি অতীব করুণ হয়। প্রবাদ আছে-অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারাখানা। পরিশ্রমহীন মানুষেরা সকলের কাছে নির্গৃহীত হয়। কোন কাজে সফলতা লাভ করতে না পেরে সমাজের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে আমাদের কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।

প্রকাশিত: দৈনিক ইনকিলাব

প্রকাশকাল: ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ইনকিলাব ০৭.০১.২০১৯