সুসম্পর্ক: একটি সুন্দর সমাজ গঠনের প্রত্যয়


Mamun Misbah প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৩, ২০২৩, ৪:২৮ অপরাহ্ণ /
সুসম্পর্ক: একটি সুন্দর সমাজ গঠনের প্রত্যয়

সুসম্পর্ক: একটি সুন্দর সমাজ গঠনের প্রত্যয়

মামুন মিসবাহ: ‘সম্পর্ক’ নিছক কোন শব্দ নয়: নানারূপ চিত্র বহনকারী ব্যাপক অর্থবহ একটি বন্ধন। অনায়াসে মুখে উচ্চারিত হলেও ভাবনার জগতে তার গভীরতা একটি বিশাল সমুদ্রের চেয়েও কম নয়। প্রতিটি জীবনে তার প্রভাব আদি থেকে অন্তে সমানভাবে পরিলক্ষিত। রক্তের বন্ধন ছাড়াও এর শ্রোত দূরাত্মীয় থেকে শুরু করে পাড়া—পড়শী, বন্ধু—বান্ধব, সহকর্মীসহ সকলের মাঝে বিদ্যমান। এটি আস্থা ও বিশ্বাসের মজবুতির উপরই টিকে থাকে; না হয় অল্পতেই ভেঙে যায়। সামাজিক জীবনে এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে একে—অপরের মাঝে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন। যা মানবসমাজকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই একে—অপরের মাঝে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উৎসাহ প্রদান করে থাকে। এমনকি ধর্মীয় দিক বিবেচনাতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সম্পর্কের মধ্যে সবচে কঠিন বিষয় হলো; সম্পর্ক বজায় রাখা। সুসম্পর্ক তৈরি করা। ভাঙন থেকে সম্পর্কটাকে রক্ষা করা। যা নিতান্তই কঠিন কাজ। এমন নয় যে, তা অসম্ভব।

এইতো, কিছুকাল আগেও মানুষ সম্পর্ক বজায় রাখতো। একে—অপরের সম্পর্কগুলো ছিলো মজবুত ও শক্তিশালী। ছিলো না তাতে কোনো স্বার্থপরতার মতো ঘৃণ্য রূপ। ছিলো না কোনো দুর্বলতা। যেকোন পরিবার টিকে থাকার উৎস—ই ছিলো এটি। বিপদ—আপদে এই সম্পর্কের রেশ টেনেই একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতো । অভাব—অনটনে বাড়াতো সাহয্যের হাত। এমনকি পাড়া—পড়শীরাও খবর রাখতো নিজেদের হাল—হাকিকতের। খুব কমই ভাঙতো বিবাহ বন্ধনের মতো কোন পবিত্র রিশতা। চুম্বকের ন্যায় ছিলো সকলের সম্পর্কের বাঁধন। পিতা—মাতার প্রতি ছিলো সন্তানের যারপরনাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ভাই—বোনদের মাঝে দৃশ্যমান ছিলো সম্পর্কের চিরাচরিত স্মৃতিপট। নিকটাত্মীয়দের সাথে ছিলো ভালো সম্পর্ক ও মেলামেশা। কেউ কাউকে ধোকা দেবে বা ঠকাবে; সেটা কল্পনাই করা যেতো না। সকলের মাঝে এমনই ছিলো আত্মার বাঁধন। মানুষের এমন রূপের কারণেই কিন্তু মানুষ বলা হয়। যার মাঝে থাকবে মনুষ্যত্ব ও একটি বিশাল হৃদয়। তাহলেই শুধু কলুষিত সমাজকে আলোকিত করা সম্ভব।

কিন্তু, পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। যুগ পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন সাধিত হয়েছে মানুষের মাঝেও। ঢুকে গেছে আধুনিকতার ছোয়া। যাকে নতুন প্রজন্ম বলেও আমরা আখ্যায়িত করে থাকি। সমাজের প্রত্যেকটি পয়েন্টে আধুনিকতা তার বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করে বসে আছে। এই আধুনিকতার কারণেই সবকিছুই এখন সহজ। যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে জ্ঞানার্জন, শিক্ষার উপকরণ, উপার্জন, কুটনৈতিক সম্পর্কসহ সবকিছুই এখন সহজভাবে আমাদের সম্মুখে। তবে, এর কারণে আমাদের সম্পর্কে পড়েছে ভাটা। স্যোসাল মিডিয়ার এক্টিভিটি আমাদেরকে আমাদের অগোচরে একে—অপরের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত করছে। সরাসরি কথা বলে সমস্যা মিটমাট না করে অভিমান বা ক্রোধ অন্তরে পুষে নিজেদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করছি। একই পরিবারের হয়ে একই বাসায় থেকেও একসাথে হই না যেনো বহুদিন যাবৎ। আমাদের প্রতিটি ঘর যেন একেকটি প্রদেশ। যার দূরত্বের কারণে সম্পর্কগুলো যেন চুপসে যাওয়া কোনো দেহ। যার জাগ্রত হওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখি দিনভর।

ঠিক একইভাবে সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে নিজেদের অবহেলার কারণে। স্বার্থটাকে নিয়ে আসছি সবার আগে। নিজেদের সম্পর্ক সেটা পরের বিষয়। একজনের প্রতি আরেকজনে অধিকার; বাবা—মার প্রতি সন্তানের অধিকার, ভাই—বোনের অধিকার, পাড়া—পড়শীর অধিকার, আত্মীয়দের অধিকার সবগুলো পালন করছি না ঠিকমতো। যার ফলে সম্পর্কে পড়েছে বিচ্ছেদভাবনা। কিছু না হতেই সম্পর্কগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি বিরক্তির রূপে। ভাই বোনের হক মেরে খাচ্ছে। বোন পাচ্ছে না তার উপযুক্ত অধিকার। বাবা—মা পাচ্ছে না তার সম্মান ও কেয়ারিং। পাড়া—পড়শী পাচ্ছে না ভালো থাকার সাময়িক খোঁজ—খবর। সমাজ পাচ্ছে না তার ন্যায্য পাওনা। বাবা—মা কাজকে সামনে রেখে সন্তান লালনে সময় দিচ্ছে না ঠিকভাবে। সন্দেহের বীজ বুনে নিমিষেই ঘটে যাচ্ছে পতি—পত্নীর বিবাহবিচ্ছেদ। বন্ধুরা খুঁজে পাচ্ছে না তাদের আসল বন্ধুত্ব। স্বাধীনতা খুঁজতে খুঁজতে আজ অনেকে শালীনতাই খুইয়ে ফেলছে। এসব কিছুর মূলে রয়েছে আমাদের নিজেদের সম্পর্ক। সম্পর্ক যেমন হবে, তেমন হবে তার বাস্তবতা। আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। যার কারণে সম্পর্কগুলো মজবুত হতে এতো বাধা! নৈতিক দায়িত্বগুলো পালন করতে হিমশিম খেতে হয় সম্পর্ক ভাঙনের কারণে। সুতরাং, সুসম্পর্ক একটি বন্ধন ও সুস্থ সমাজ গড়ার মাধ্যম। এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। নিজেদের প্রতি রাখতে হবে বিশ্বাস ও আস্থা। তাহলেই এই সমাজ একটি আলোকিত সমাজের রূপ ধারণ করবে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সম্পর্ক ভালো রাখা ও শক্তিশালী রাখার বিকল্প নেই। তাই সুসম্পর্ক ও শক্তিশালী বন্ধন একটি আলোকিত সমাজের প্রত্যয়।

দ্বিমাসিক ডাকঘর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত