সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন


Mamun Misbah প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৩, ২০২৩, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ /
সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মামুন মিসবাহ: বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলিম আইন অনুসারে এদেশের ‘উত্তরাধিকার আইন’ বাস্তবায়িত হয়। সেটাকে ইসলামি শরিয়তে ‘ইলমুল ফারায়েজ’ বলা হয়ে থাকে। আরবিতে সংক্ষেপে বলা হয় ‘মিরাস’। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার আলোকে ইলমুল ফারায়েজ বা উত্তরাধিকার আইন সাজানো। তাতে সবার অংশ নির্ধারণ করা দেয়া হয়েছে। কে কতটুকু পাবে? কোন সময় পাবে? প্রতিটি বিষয় খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সে হিসেবে মুসলিম নারীদের অংশও তাতে নির্ধারিত। পবিত্র কুরআনে এমনটাই বলা হয়েছে, পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ আছে। তা কম হোক অথবা বেশি; তা নির্ধারিত অংশ (সুরা আন নিসা: ৭) আরও বলা হয়, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান (সুরা নিসা: ১১)

নারীরা অনেক ক্ষেত্রে মিরাস পেয়ে থাকেন। যেমন, মেয়ে হিসেবে, মা হিসেবে, বোন হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে নানাভাবে তাদের মিরাস নির্ধারিত। কিন্তু, অনেকের মিরাস সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকার কারণে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত হন। আবার কারও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জানাশোনা না থাকার কারণে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করেন এই ভেবে যে; ইসলাম এক্ষেত্রে বৈষম্য করেছে নারীদের প্রতি। তাদের দেয়নি সমান অধিকার। অথচ, ইসলাম নারীদের উপযুক্ত সম্মান ও ন্যায্য অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো কমতি রাখেননি কোথাও। যা কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামি ইতিহাস চর্চা করলেও বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে প্রতিভাত হবে দুই চোখে। ইসলামের শুরু জামানা থেকে নারী অধিকার নিশ্চিতে ইসলাম সর্বদাই ছিল তৎপর।

তবে, যারা এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন তাদের মধ্যেও দেখা যায়, নারীর অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা ও বৈষম্য। বিশেষ করে, ভাইকর্তৃক বোনের অধিকার বঞ্চিতকরণ তো আমাদের সমাজে একটা ট্রেন্ড। ইচ্ছা করেই মা-বোনকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। বেশি দূরে নয়; নিজেদের ঘর, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শি ও পেপার-পত্রিকায় চোখ বুলালেই দেখা যায় এমন অহরহ ঘটনা। যা নিতান্তই দুঃখজনক। কোনো কোনো ভাই আবার দলিলও পেশ করে থাকেন যে; বিয়ের আগে বোনের খরচ দিয়েছি, বোনের বিবাহ দিয়েছি, আর কী লাগে! অথচ পিতার অবর্তমানে এগুলো যে তার দায়িত্বের ভেতরে পড়ে সে কথা সে জানেই না! উপরন্তু, উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে নারীদের বঞ্চিত করা গোনাহের একটা কাজ। তাতে উত্তরাধিকার বণ্টনের বিষয়টিকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখা হয়। অথচ, আল্লাহ এই দায়িত্বটিকে ফরজ করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের উত্তরাধিকারগত সম্পদ সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন’ (সুরা নিসা: ১১)

পারিবারিক বিষয় হিসেবে এগুলো অনেক সময় গোপন থেকে থেকে যায়। কেউ জনসম্মুখে নিয়ে আসতে চায় না চক্ষু-লজ্জার ভয়ে। কেউ কেউ ভাবে এতে করে পরিবারের সম্মান ক্ষুণœ হবে। অথচ, সেটা যে তার ন্যায্য অধিকার; সে কথা ভুলেই বসেছে। বাংলাদেশের মতো অর্থনির্ভর একটা দেশে এমন অবিচার একটা পরিবারে বা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিকর তা একজন ভুক্তভোগী ভালো বোঝে। এই কারণে কতটা ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ ও সমাজ তা চোখের সামনে সুস্পষ্ট। অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও পারিবারিক সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি এর প্রধান দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে পড়ে। কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতার দৃষ্টান্তগুলো। কিছু কিছু মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়; তারা একেকজন বাহিরে অনেক স্বনামধন্য; অথচ তাদের পারিবারিক সম্পর্ক মোটেও ভালো না। একে-অপরের প্রতি অধিকারগুলো আদায় করছে না ঠিকমতো। অধিকার বঞ্চিত করছে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনদের। এটাকে সামান্য একটা বিষয় ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছে সবসময়। আবার কেউ কেউ ধর্মীয় সব বিষয় আদায়ে সবার অগ্রে; কিন্তু নারীদের অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে সবার পেছনে। এমন উদাহরণ আমাদের আশপাশে কম নয়; অনেক।

সুতরাং, মুসলিম আইনে নারীদের সম্পত্তির যে অধিকার রয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে কোনো নারী তার প্রাপ্য উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। এজন্য নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। যাতে বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। যারা নারীদের অধিকার বঞ্চিত করছে তাদের যেন নেয়া হয় আইনের আওতায়। এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বদা সোচ্চার ও অগ্রগামী হয়। যাতে করে অধিকার বঞ্চিতকারীরা এমন ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকে। তবেই শুধু সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।

প্রকাশ:
• দৈনিক শেয়ার বিজ (২১.০১.২৩)
লিংক: https://urlis.net/axq0q96k
• দৈনিক খোলা কাগজ (২২.০১.২৩)
• দৈনিক খবরপত্র (২৫.০১.২৩)
লিংক: https://khoborpatrabd.com/archives/97392
• দৈনিক নয়া দিগন্ত (২৪.০১.২৩)

Low 20201130045032