খবরে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ও দায়রা জজ হুমায়ুন দিলাওয়ার তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, ‘পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সম্পদের ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’ তারপর বিচারক ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে এক লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়।
এর আগে গত ৯ মে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে পিটিআই প্রধানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা পাকিস্তান। পরে দুই দিনের মাথায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)
বলাবাহুল্য, ক্ষমতায় থাকাকালে ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরোধের জেরে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল এ অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট।
ওই দিন অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের বৈধতা নিয়ে শুনানি গ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। শনিবার (৯ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিরও নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, অনাস্থা ভোট শুরু হওয়ার আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে পারবেন না। (দৈনিক যুগান্তর, ১০ এপ্রিল)
মূল বিষয়টা হচ্ছে ইমরান খানকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে কোণঠাসা করে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করা। কেন ইমরান খানের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে তার রাজনীতির গতিবিধি লক্ষ করতে হবে। পাকিস্তানের আলোচিত ও সমালোচিত দুই পরিবার (শরিফ ও ভুট্টো) পরিবারতান্ত্রিকভাবে পালাক্রমে পাকিস্তানকে লুটেপুটে খাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে অনেক অভিযোগ আবার আদালত কর্তৃক প্রমাণিতও হয়েছে। ফলে এসব দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের কারণে পাকিস্তান ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে, যেখানে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই পাকিস্তানকে পরিবারতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বের করে এনে দেশের জনগণের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করতে, একটি নয়া পাকিস্তান গড়তে, দেশ ও জনগণের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে সফল ক্রিকেট অধিনায়ক থেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে ইমরান নিয়াজী খান আবির্ভূত হন। প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নামক রাজনৈতিক দল। তিনি সফল ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে সম্মান ও খ্যাতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সব ছেড়ে পরিবারতান্ত্রিক শোষণ থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে এবং শোষণমুক্ত নয়া পাকিস্তান গড়তে রাজনীতির ময়দানে এসেছেন। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে যখন পাকিস্তানের স্ট্যাবলিশম্যান্ট তথা সেনাবাহিনীর স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করা শুরু করলেন, তখন নানা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনাবাহিনী যখন দেখল ইমরান খানের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, তখন তারা ভীত হয়ে পুতুল সরকার শাহবাজ শরিফের মাধ্যমে আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে তাকে এবং তার দলের নেতা-কর্মীদের আটক করতে লাগল, অত্যাচার ও নির্যাতন করতে লাগল, যা এখনও অব্যাহত আছে। সর্বশেষ ইমরান খানকে একটি সাজানো সিস্টেমের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে তিন বছরের সাজা দেয়া হলো। একটা নাটকীয় বিষয় হলো, সাজা হওয়ার পরপরই নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে পাঁচ বছরের জন্য ব্যান বা নিষিদ্ধ করা হলো, যা সাজানো ও গোছানো, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন প্রশ্ন হলো পাকিস্তানের স্ট্যাবলিশমেন্ট কি পারবে ইমরান খানকে দমিয়ে রাখতে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনোদিন কোনো জনপ্রিয় নেতাকে কেউ কখনও দমিয়ে রাখতে পারে না। সাময়িক তাদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার ও নির্যাতন, কিন্তু সত্যের বিজয় হবেই। ইমরান খানও সব বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং জনগণের ম্যানডেট নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে পারেন। ইমরান খান পাকিস্তান ও পাকিস্তানের বাইরে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। তাই যদি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইনসাফ কায়েম করে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়, তবে পাকিস্তান এগিয়ে যাবে। নতুবা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের স্ট্যাবলিশম্যান্ট তথা সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের মতো ভুল পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না। বরং পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসবে এবং সত্যের পক্ষে অবস্থান নেবে। আর তা না হলে এখন যেরকম পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়েও তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে, তা আগামীতে আরও করুণ অবস্থার সৃষ্টি করবে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছাবে। দেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হবে। জনগণের বিক্ষোভ বাড়তে থাকবে। সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। কারণ যে দেশে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়, সে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজমান থাকে, যা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। আমরা চাই, মুসলিম দেশের মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ধারা বিরাজমান থাকুক। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোক। দেশের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুক।
শিক্ষার্থী
দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :