সংকট নিরসনে সাশ্রয়ী হওয়া জরুরি


ruhul প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৩, ২০২৩, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ /
সংকট নিরসনে সাশ্রয়ী হওয়া জরুরি
রুহুল আমিন: মহামারীতে কেঁপে ওঠা বিশ্বের মানুষ ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মুখোমুখি হলো আরেক কঠিন সময়ের। ঠিক দুই বছর আগেই যেখানে কোভিড থেকে বাঁচতে পারাটাই যেন একমাত্র চাওয়া, সেখানে মানুষকে এখন সম্মুখীন হতে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত নতুন নতুন সঙ্কটের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে অপরিশোধিত তেল এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব জুড়ে তৈরী হয়েছে জ্বালানি সংকট। জ্বালানি শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস। বর্তমানে সারাবিশ্বে যে তেল উৎপাদিত হচ্ছে তার ১১-১২ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা পূরণ হয় রাশিয়া থেকে। বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশও ফল ভোগ করছে কারণ বাংলাদেশর ৪০ শতাংশ জ্বালানিই আমদানি করে। বৈশ্বিক বাজারে তেল ও গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাংলাদেশেও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে মৌলিক জ্বালানি সরবরাহ হ্রাসের ফলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে। ফলে দেশে তৈরী হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। দেশের প্রত্যেক জেলা উপজেলাকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র লোডশেডিংয়ে মানুষের জনজীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে গ্রীষ্মের তাপ ও তীব্র দাবদাহ বেড়ে চলেছে। এই তীব্র দাবদাহে বেশী সমস্যায় পড়েছে রোগী, শিশু ও প্রবীণরা। শিক্ষার্থীরা লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিক মতো পড়াশোনা করতে পাড়ছে না।
চলমান এই বৈশ্বিক সংকট নিরসনের জন্য আমাদের সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। চলমান সঙ্কটে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এসবের (জ্বালানি, খাদ্য) সংকট শুরু হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষকেও যার যার জায়গা থেকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা উন্নত বিশ্বও এ পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছে। সড়কে বাতি, বিলবোর্ড গুলোতো বিদ্যুৎ এর পরিবর্তে সৌর শক্তি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমার টাকায় আমি বিদ্যুৎ বিল দেই তাই আমার যা ইচ্ছা তাই করবো সেখান থেকে সরে আসতে হবে। আমরা অনেকেই বাসা বাড়িতে অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখি। কাপড় শুকানোর জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। অযথা এসব গ্যাস ব্যবহার থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। আমরা অনেকই রুম থেকে বের হওয়ার সময় বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা এবং এসি বন্ধ করি না। দিনের বেলায় রুমে দরজা জানালা বন্ধ রেখে লাইট জ্বালিয়ে রাখি। বিদ্যুৎ অপচয় করতে বেশি দেখা যায় বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হল, সরাকারি কলেজ হোস্টেল, মেডিকেল কলেজের হোস্টেল গুলোতে। এ সকল হল/হোস্টেল গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা রান্না করার জন্য সকাল বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করে থাকে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এ সকল বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালিয়ে রাখে। অনেকে শীতকালে রুমের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালিয়ে রাখে। ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় আমরা বৈদ্যুতিক পাখা এবং এসির সুইচ গুলো বন্ধ না করে চলে আসি। আমাদের শিক্ষিত সমাজের জন্য এটি লজ্জার। বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারা ভাবে যে বিদ্যুৎ বিল বাড়িওয়ালা দিবে আমি কম কেন ব্যবহার করবো এটা ভেবে অনেকেই বিদ্যুৎ অপচয় করে।আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় প্রয়োজন অপ্রয়োজন না ভেবে আমারা এসিসহ নানা বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। ঠুনকো কারণে বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় আলোক সজ্জা করে থাকি। আমাদের সবাইকে রুম থেকে বের হওয়ার সময় রুমের বৈদ্যুতিক বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, এসি বন্ধ করতে হবে। দিনের বেলা রুমে বৈদ্যুতিক বাতি না জ্বালিয়ে জানালা দরজা খুলে দিয়ে প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় রুমের লাইট এবং অপ্রয়োজনীয় লাইট গুলো বন্ধ রাখতে হবে। টয়লেট থেকে বের হয়ে আসার সময় লাইট বন্ধ করে আসতে হবে। ওয়াসিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ, রাইস কুকার, ক্যারি কুকার, ওভেন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে।
বিদ্যুৎ, গ্যাস কারো ব্যাক্তিগত সম্পদ নয় জাতীয় সম্পদ। তাই চলমান সংকট নিরসনের জন্য প্রত্যেক নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো এর সঠিক ব্যবহার করা। আমাদের জাতীয় সম্পদের অপচয় না করা। বিভিন্ন ধর্মে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআনে সুরা বনি ইসরাইলে অপচয় কারীকে আল্লাহ তায়ালা শয়তানের ভাইয়ের সাথে তুলনা করেছেন। আমাদের কে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে সচেতন করতে হবে। আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের সচেতন করতে হবে। সমাজে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে  বিষয় গুলো তুলে ধরতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস অপচয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া চলমান সংকট নিরসনের বিকল্প নেই।

প্রকাশ কাল: ১২,১৩ এবং ১৪ আগস্ট , ২০২২

প্রকাশিত: আজকালের খবর, আলোকিত বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ বুলেটিন

Ajkaler khobor biddut o jalani save Alokito bangladesh biddut o jalani Bangladesh buletin biddut o jalani