নতুন বছরে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য পূরণ হোক


ruhul প্রকাশের সময় : আগস্ট ১২, ২০২৩, ১১:৩০ অপরাহ্ণ /
নতুন বছরে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য পূরণ হোক
রুহুল আমিন: দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। এখন আমরা জোর গলায় বলতে পারি আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর স্বাধীনতা একবার এসেছিলো। আমরা নতুন পতকা, রাষ্ট্র, সংবিধান,  রাজধানী ও দালানকোঠা,  ভূখন্ড সবই পেয়েছিলাম। কিন্তু জনগণ মুক্তি পায় নি। দুই দেশের মধ্যে শত শত মাইল দুরত্ব ছিলো। মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি,  খাবার,  পোশাক এবং ঐতিহ্য ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। দেশ ভাগের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিলো প্রায় দুই কোটি আর পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিলো প্রায় চার কোটি। কোন জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ জন লোক থাকলে পূর্ব পাকিস্তানের দশ জন লোক থাক উচিত কিন্তু বাস্তবে হলো তার উল্টাটা। সব কিছুতেই পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন ছিলো ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। বাজেটের ছিলো বিশাল পার্থক্য। বাজেটের ৭৫% ব্যায় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানে বাকি ২৫% ব্যায় করা হতো পূর্ব পাকিস্তানে। দিন দিন অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং জাতিগত নিপিড়ন বাড়তে থাকে। শাসন ব্যাবস্থার পুরাটাই ছিলো পূর্ব পাকিস্তান বিরোধী। সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী , আমলাতন্ত্র, জেলখানা, আদালত সব কিছু ছিলো তাদের অধিপত্যে। ব্যবসা বানিজ্য, প্রচার মাধ্যোম, শিক্ষা ব্যাবস্থা সবকিছু ছিলো তাদের অধিনে। বাঙ্গালীদের সব ক্ষেত্রে দমিয়ে রাখা হতো। তারা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে স্বকৃীতি দিতে চায় নি। বাঙালী যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে গনতন্ত্র চর্চার অভাব, ক্ষমতাসীনদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বারবার ক্ষমতার হাতবদল এবং বৈষম্য বাড়তে থাকে।
আমরা ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা চেয়েছিলাম তা কি আমরা পেয়েছি। আসলে আমাদের ভুল জায়গায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বাঙ্গালীরা কাঙ্খিত স্বাধীনতা না শুধু পেয়েছে শোষণ আর নিপীড়ন। এ সকল শোষণ নিপিড়ন সহ্য করতে না পেরে দীর্ঘ ২৪ বছর পর বাঙালী আবার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। সকল বৈষম্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দাফা দাবী পেশ করেন। যা ছিলো আমাদের বাঁচার দাবি। দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছিলো। মানুষ চেয়েছিলো বৈষম্য দূর হবে, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো সহজলভ্য হবে। স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও কি মানুষের মাঝে বৈষম্য দূর হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে পাওয়া যাবে যে, মানুষ আজ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। নিজের আয় দিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার চালানো দূর্বিষহ হয়ে পরছে। কেউ গড়ছে সম্পদের পাহাড় আবার কারো বেঁচে থাকা দায়। কেউ কেউ অবৈধ ভাবে বিদেশে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা। আবার কারো মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত দ্রব্য মূল্যের বুলডোজারের আঘাতে পিষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। অনেক কুচক্রী মহল বস্তি গুলোতে আগুন ধরিয়ে অসহায় মানুষদের উচ্ছেদ করে তুলছে বড় বড় দালান কোঠা। বড় বড় দালান কোঠা উঠলেও বস্তি বাসীর দুর্ভোগের কোন পরিবর্তন হয়নি। শহরের পথের ফেরিওয়ালা কি তাদের পরিবার নিয়ে সহজে জীবন যাপন করতে পারতেছে? পথে ফেরিওয়ালাদের কাছে এক ধরনের ক্ষমতাসীন কুচক্রী মহল চাঁদা আদায় করে। ফুটপাতে আর চাঁদাবাজদের দখলে। দিন দিন বাড়ছে খুন রাহাজানি। কৃষক এবং উদ্দোক্তারা পাচ্ছে না তাদের পণ্যের সঠিক মূল্য। এক ধরনের মানুষ সিন্ডিকেট তৈরী করে বাজার কৃত্রিম সংকট তৈরী করছে। মানুষের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা। রাজনৈতিক দলগুলো একবার ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানি কায়দায় বিরোধী দল গুলোকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আমলাদের নিজেদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। রাজনীতিতে তৈরী হচ্ছে লেজুড়বৃত্তি। রাজনীতিতে সুবিধাবাদী নেতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে সহিংসতা বাড়ছে। মানুষ পিটিয়ে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা এখন আনন্দ পায়। দেশের শিক্ষক মহলরা রাজনীতিতে জড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। তারা শিক্ষাদানের চেয়ে রাজনীতিতে বেশী উৎসাহী হয়ে পড়ছে। জাতির পথ প্রদর্শক মহান শিক্ষকরা আবার প্রশ্ন ফাঁস এর মতো মহত কাজের সাথে জড়িত হচ্ছে। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার দিনাজপুর বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে তিন শিক্ষক গ্রেপ্তার হন। দেশের সকল স্কুল কলেজে পর্যাপ্ত খোলর মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ পাচ্ছে না ফলে আসক্ত হচ্ছে বিভিন্ন মেবাইল গেমে। কিছুদিন আগেও মাঠের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের সকলকে একসাথে লড়তে হবে। রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের মূল্যবোধ এবং সঠিক আদর্শ ধারণ করতে হবে। মানুষকে দেশপ্রেমিক হতে হবে। সকলকে নিজের নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। সরকারকে দেশের পিছিয়ে পড়া লোকদের দিকে নজর দিতে হবে। সকলের যেন বাক স্বাধীনতা খর্ব না হয়। দেশের যুবকদের সঠিক পথে আনতে হবে। নতুন প্রজন্ম যেন ধ্বংস না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সকালের মাঝে দেশ প্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে।

প্রকাশ কাল: ৯ জানুয়ারি, ২০২৩

প্রকাশিত: শেয়ার বিজশেয়ার বীজ নতুন বছরে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য পূরণ হোক09.01.23