আখতার হোসেন আজাদ: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বেঁচে থাকার জন্য সে পরিবারের বন্ধনে থেকে সমাজে বসবাস করে। জাতিগত স্বকীয়তার জন্য মানুষ রাষ্ট্র গঠন করে থাকে। একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড যার সার্বভৌমত্ব আছে, জনগণ আছে ও সরকার আছে সেই ভূখন্ডটি রাষ্ট্র নামে পরিচিত। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রই কল্যাণ রাষ্ট্র। রাষ্ট্র নাগরিকদের জানমালের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব থাকে ঠিক তেমনই নাগরিকদেরও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হয়।
নাগরিকের সর্বপ্রধান হলো আনুগত্য স্বীকার করা। কেবল মুখেই স্বীকার নয় বরং কাজের মাধ্যমে তা পালন করা। রাষ্ট্রের যিনি নেতৃত্ব দিবেন তার আনুগত্য করা বা রাষ্ট্র যেসব আইন বা বিধি-বিধান জারি করবে তা নিজে পালন করা এবং অন্যকে পালন করতে উৎসাহিত করা নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হওয়া উচিত। প্রতিটি ধর্ম নাগরিকদের দেশপ্রেমের শিক্ষা দেয়। দেশপ্রেম ছাড়া ধার্মিক হওয়া সম্ভব নয়। একজন নাগরিকের অব্যাহত প্রচেষ্টা থাকবে কিভাবে দেশ ও জাতির উন্নতি সাধন করা যায়। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে হলেও দেশের জন্য, নিজ জাতির জন্য এমন কিছু কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে যেন তা থেকে রাষ্ট্র উপকৃত হতে পারে। যে দেশের নাগরিক যত সভ্য, সুশীল ও দায়িত্ববান সে দেশ তত উন্নত ও অগ্রসর। নাগরিকদের দায়িত্বহীনতা ও অনগ্রসরতা পুরো জাতিকেই পিছিয়ে দেয়। নাগরিকদের মাঝে আত্মত্যাগের মনোভাব, কর্মস্পৃহা, নতুন ভাবনা উৎঘাটন রাষ্ট্রকে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে সাহায্য করে। রাষ্ট্র তার নাগরিকের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি যেমন ভাববে তেমনই রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের উচিত দেশ ও জাতিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। নাগরিকের দ্বায়িত্ববোধ ও আত্মত্যাগ রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। নাগরিকের দায়িত্বহীনতা ও অনগ্রসরতা জাতি ও দেশকে পিছিয়ে দেই। চেতনা ও মূল্যবোধ পুষ্ট না হলে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করাতো দূরের কথা বরং এমন নাগরিক দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ।
রাষ্ট্র এমন নাগরিক প্রত্যাশা করে যারা কেবল নিজের জন্য নয়, দেশ ও জাতির জন্য আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে আদর্শ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য নিজেকে সপে দেওয়া একজন আদর্শ নাগরিক রাষ্ট্রে অন্যতম চাওয়া। একজন আদর্শ নাগরিকের কাছে তার দেশের চেয়ে বড় কিছু থাকতে পারেনা এবং দেশের মঙ্গলের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে কুন্ঠিত হন না। নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালোবাসা আদর্শ নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি ধর্ম দেশের দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়েছে। একজন আদর্শ নাগরিক রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ। নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে হলেও দেশের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। সকল ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ গড়ে তোলাও একজন আদর্শ নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোন অধিকার আদায় করার দাবীতে আন্দোলন করলেও তা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া চাই। সহিংস আন্দোলনের ফলে জানমাল ও রাষ্ট্রের সম্পদের যেমন ক্ষতি হয় তেমনই বিশে^র বুকে নিজ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণ রাষ্ট্র কামনা করে। ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অহেতুক গাছ কাটা, বনাঞ্চল উজাড় করা, প্রবাহমান পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্র এমন বৈশিষ্ট্যের নাগরিক কামনাা করে যারা রাষ্ট্রের আনুগত্য করে, রাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনে চলে, রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে সহযোগিতা করে, রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত কর যথাসময়ে প্রদান করে, কোন দুর্যোগে সরকারের পাশে থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, সব ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি থেকে বিরত থাকে, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি না করে, দলমতের উর্ধ্বে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে।
রাষ্ট্রের নাগরিকদের উচিত, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সূখী, সমৃদ্ধশালী ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।
প্রকাশিত: দৈনিক জনতা
প্রকাশকাল: ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
আপনার মতামত লিখুন :