সুকান্ত দাস:
বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। এটা বিশেষত তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির বাসস্থানের সামনে বিলবোর্ডে লেখা থাকে। সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ মানুষই দেশের সকল ক্ষমতার উৎস। সেক্ষেত্রে এই ধরনের বিলবোর্ড বা লেখা দেখে জনমনে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
এই সাধারণ তত্ত্বটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে খুব দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বলা হয় দাবিগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিংবা এমন দেখা এবং শোনা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যে প্রশ্নটি আগে মাথায় আসে তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হন তারা সবাই শিক্ষার্থী। তাহলে এদের মধ্যে সাধারণ বলে একটা শ্রেণিকে আলাদা করা হলে অসাধারণ শিক্ষার্থী কারা?
ছোট বেলায় স্কুলে শিক্ষকদের মুখে শুনতাম অমুক ছেলেটা পড়াশোনায় অসাধারণ। তো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথমে সাধারণ শিক্ষার্থীর কর্মসূচি কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থী শব্দটি শুনে মনে করতাম তাহলে যারা পড়াশোনায় মধ্যম এবং নিম্ন শ্রেণির তারাই সাধারণ। আর যারা পড়াশোনায় খুব ভালো তারা অসাধারণ শিক্ষার্থী।
তবে কিছুকাল পরে সেই ধারণার পরিবর্তন হলো। দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে নিগৃহীত শ্রেণিই আসলে সাধারণ শিক্ষার্থী। এরা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সরাসরি সমর্থক না, ঝামেলায় জড়াতে চায় না কিন্তু ঝামেলায় পড়ে যায়, মিছিলে এদের দেখা যায় না, টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালায়, সময় পেলে চায়ের দোকানে বসে না পেলে বসে না, পড়াশোনা শেষ করেই পরিবারের হাল ধরার তাগিদ থাকে মূলত এরাই আসলে সাধারণ শিক্ষার্থী। এরা অধিকার সচেতন হলেও কখনোই নিজেদের অধিকার নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করে না। অনেকটা সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের মতো। কোনোমতে খেয়ে পরে দিন যায় আরকি। আর অসাধারণ শিক্ষার্থী বলতে যেটা দেখি, এরা মূলত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী। বর্তমানে যদিও কর্মীর খুব সংকট, সবাই নেতা। তবুও এই ধরনের যারা আছে তারাই বর্তমানে নামধারী অসাধারণ।
কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে অনেকসময় আন্দোলন, মানববন্ধন কিংবা স্মারকলিপি দিতে দেখা যায়। আগেই বলেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সময়েই এসব আন্দোলন, মিছিলে থাকে না। তাহলে তারা কীভাবে আসলো? আসলে তারা বেশিরভাগ সময়ে আসে না। বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ধারণ করে আসে। সে যেই সংগঠনই হোক না কেনো। হ্যাঁ তাদের কর্মসূচীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা অবশ্যই থাকে। কিন্তু আদতে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এই সাধারণ শিক্ষার্থী তত্ত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। কেউ সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে কতৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিলে তাদের প্রতিপক্ষরা এটা নিয়ে হাসি তামাশা করছে। চলছে দুই গ্রুপের বাদানুবাদ। কিন্তু এসবের মধ্যে যে বিষয়টি একইরকম থেকে যাচ্ছে তা হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার গুলো! সেগুলো যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী তত্ত্ব ব্যবহার বন্ধ হোক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টি সবার। এখানে কেউ সাধারণ, কেউ অসাধারণ নয়।
প্রকাশিত: ডেল্টা টাইমস
প্রকাশকাল: ১৯ জুন, ২০২৩
আপনার মতামত লিখুন :